আকরাম হোসেন
নওগাঁ
প্রশ্ন : আমার ধানের চারা (বীজতলায়) হলুদ হয়ে যাচ্ছে। চারা বড় হচ্ছে না। এখন কী করতে পারি?
উত্তর : বোরো ধানের জন্য বীজতলার পানি ১-২ ইঞ্চি রাখতে হবে।
-পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে।
-শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে নতুন পানি দিতে হবে।
-প্রতিদিন সকালে কুয়াশার পানি রশি টানা দিয়ে সরিয়ে দিতে হবে।
- ঠাণ্ডা সহনশীল জাত যেমন- ব্রি-ধান৩৬, ব্রি- ধান৫৫ চাষ করতে হবে।
গোলাম রাব্বানী
রংপুর
প্রশ্ন : আমার আলু গাছের বয়স ২০-২৫ দিন। পাতাগুলো প্রথমে কিনারা দিয়ে বাদামি দাগ হয় পরে ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি দাগগুলো বাড়তে থাকে আর পরে কালো কালো হয়ে যায়। এখন কী করব?
উত্তর : আপনার আলু গাছে ছত্রাকজনিত রোগ হয়েছে, যাকে আগাম ধসা রোগ বলা হয়।
-এ রোগ প্রতিরোধে আপনি সুষম সার ও পরিমিত সেচ দিন।
-ঘন কুয়াশার কারণে এ রোগ বেশি ছড়াতে পারে সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধক হিসেবে বর্দো মিক্সচার অথবা ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ডায়থেন এম-৪৫) ২-৩ গ্রাম রোভরাল ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করুন।
মামুন
যশোর
প্রশ্ন : আমার আমগাছে মুকুল আসে কম এবং ঝরে পরে ও নষ্ট হয়। গাছের বয়স ৪-৫ বছর এ ক্ষেত্রে আমি কী করতে পারি জানাবেন কী?
উত্তর : ঘন কুয়াশায় আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এ রকম আবহাওয়ায় বর্দো মিক্সচার বা মনিফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের মুকুল আসার ২ মাস আগে থেকেই সেচ ও সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বছরে দুইবার সঠিক সময়ে কিস্তিতে সার দিলে আবার পরের বছর ভালো ফলন পাওয়া যাবে। মুকুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা পেতে মুকুল আসার আগেই যদি গাছে ১ মিলিলিটার রিপকর্ড/৩২.৫ মিলিলিটার কম্প্যানিয়ন নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যায় তাহলে মুকুল ঝরা রোধ করা সম্ভব।
সাইদুর রহমান
সিরাজগঞ্জ
প্রশ্ন : সরিষা গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। কালো কালো দেখা যাচ্ছে। পাতা, কা-, ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছে ছোট ছোট পোকা আছে। এ পোকা কীভাবে দমন করা যাবে?
উত্তর : সরিষা গাছে সাধারণত জাবপোকার আক্রমণে পাতা কা- ডগা শুকিয়ে যায়। পাতাও কুঁকড়ে যায়। জাবপোকা এক ধরনের রস নিঃসরণ করে তাতে শুঁটিমোল্ড জন্মে এবং কালো দেখায়। এ পোকা দমনে যা করতে হবে তাহলোÑ
-ভাট পাতা পিষে রস করে ১:১০ অনুপাতে মিশ্রণ তৈরি করে ছেঁকে ৭ দিন পর পর স্প্রে করা।
-নিমের বীজ ৫০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তা স্প্রে করা।
-১ লিটার পানিতে ৩ থেকে ৫ গ্রাম গুঁড়া সাবান মিশিয়ে স্প্রে করা।
-আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা।
-প্রতি গাছে ৫০টির বেশি পোকা থাকলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন মিশিয়ে বিকালে স্প্রে করা।
- আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটারে ০.৫ মিলি লিটার এডমায়ার বা তিতো মিশিয়ে স্প্রে করা।
শহীদুল ইসলাম
জামালপুর
প্রশ্ন : পেঁয়াজ গাছের পাতায় হালকা বাদামি বা কালো দাগ পড়ে। গাছ ওপর থেকে মরে আসছে, করণীয় কী?
উত্তর : এটা পেঁয়াজের ছত্রাকজনিত রোগ। স্যাঁতসেঁতে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো-
-আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা।
-অতিরিক্ত সেচ দেয়া বন্ধ করা।
-বীজ শোধন করে বপন করা।
-রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইপ্রোডিয়ন (ইতারাল, রোভরাল) এককভাবে অথবা ২ গ্রাম রোভরাল+২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করা।
সজীব
পাবনা
প্রশ্ন : হাঁসের প্লেগ হলে করণীয় কী?
উত্তর : সুস্থ হাঁসগুলোকে আলাদা করে ফেলতে হবে। অসুস্থগুলোকে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে। ডাক প্লেগ, ঠিকা ১০০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে ১ মিলিলিটার মিশিয়ে বুকের মাংসে দিতে হবে। ৬ মাস পর পর ৩ সপ্তাহ বা তদূর্ধ্ব বয়সের হাঁসকে দিতে হবে।
Ciprofloxacin Igm/litre Antibiotic injection অথবা Tablet renamycin Icc ওজন অনুযায়ী সেবন করাতে হবে। আক্রান্তগুলোকে আলাদা করে সুস্থদের ভ্যাক্সিনেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ অবস্থায় টিকা দিতে হবে।
-২৮ দিন বয়সের হাঁসের ক্ষেত্রে Renamycin 100, 0.5cm/ Indigenous Duck DPV টিকা ১০০ সিসি পানিতে গুলিয়ে ১ সিসি পরিমাণ বুকের মাংসে দিতে হবে।
লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্তগুলো আলাদা করে ফেলতে হবে। মারা গেলে মাটির ২-৩ ফুট নিচে গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
হরবোল
নাটোর
প্রশ্ন : গাঁট ফোলা রোগে করণীয় কী?
উত্তর : জীবাণুর সংক্রমণ রোধে সালফার ড্রাগস কিংবা অক্সিটেট্টাসাইক্লিন জাতীয় ড্রাগস ব্যবহার করতে হবে।
-ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ইনজেকশন মাংসপেশিতে দিতে হবে।
-পাশাপাশি যে কোনো একটি অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইনজেকশন দিতে হবে।
-করটিফোস্টেরয়েড ইনজেকশন দিলেও সুফল পাওয়া যায়।
শরীফ
জামালপুর
প্রশ্ন : গরুর কাঁধে ঘা হয়েছে। কী করণীয়?
উত্তর : আইভারমেকটিন (Ivermectin) ০.২ মি. গ্রাম/ কেজি হিসেবে চামড়ার নিচে ২৮ দিন অন্তর দুইবার ইনজেকশন দিতে হবে।
০ নেগুভন ১-২% সলুশন দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো একটি অ্যান্টিহিস্টাসিনিক ইনজেকশন দিলে ভালো কাজ করে।
০ দ্বিতীয় পর্যায়ের জীবাণু সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সালফার ড্রাগ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিতে হবে।
আবু রায়হান
জয়পুরহাট
প্রশ্ন : পুকুরের পানিতে কতটুকু প্রাকৃতিক খাদ্য আছে তা কীভাবে জানব?
উত্তর : হাতের তালু পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে বা সেক্কি ডিস্ক (Secchi disk) নামক যন্ত্রের সাহায্যে এ পরীক্ষা করা যায়। হাত কনুই পর্যন্ত ডুবিয়ে যদি হাতের তালু পরিষ্কার দেখা যায় তাহলে পুকুরে মাছের খাবার খুবই কম আছে বলে ধরে নিতে হবে। আর যদি না দেখা যায় এবং পানির রঙ সবুজ থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে পুকুরের পানিতে পর্যাপ্ত খাবার আছে। একইভাবে সেক্কি ডিস্ক যন্ত্রটি ১ থেকে ২ ফুট পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে এই পরীক্ষা করা যায়।
সুজন দেবনাথ
ময়মনসিংহ
প্রশ্ন : পুকুরের পানির ওপর সবুজ (ব্লুম) বা বাদামি বর্ণের আস্তরণ দেখা যায় কীভাবে সমাধান করা যায়? অনেক সময় লাল আস্তরও দেখা যায়।
উত্তর : কাপড় বা মশারি দিয়ে আস্তরণ তুলে ফেলতে পারলে ভালো যদি কাপড় বা মশারি দিয়ে সম্ভব না হয় তাহলে খড়ের দড়ি বেঁধে তা দিয়ে পুকুরের উপরে টেনে এক কোণায় এনে তুলে ফেলতে হবে। অথবা ব্লুম বা সত্বর একত্র করার পর ২০০-২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিলে তা নষ্ট হয়ে যাবে।
তুঁতের ব্যবহার : একরপ্রতি ২০-২৫টি ৫০ গ্রাম তুঁতের কাপড়ের পুঁটুলি বেঁধে খুঁটিতে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে রাখা। শতকপ্রতি ০.৫ কেজি চুন প্রয়োগেও ফল পাওয়া যায়।
রেজাউল করিম
নাটোর
প্রশ্ন : মাছের ফুলকা পচা রোগ হলে কী করব?
উত্তর : প্রতি শতাংশে আধা কেজি চুন ৭ দিন পর পর দিতে হবে। চুন ১ কেজি/শতক হারে প্রয়োগ করতে হবে। ঘাযুক্ত মাছগুলো পুকুর থেকে তুলে ২০ লিটার পাত্রে পানি নিয়ে তাতে ২০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে পানিতে মাছগুলোকে ৫ মিনিট রাখতে হবে। অন্য একটি পাত্রে একই পরিমাণ পানি নিয়ে ৫ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে ৫ মিনিটের জন্য মাছগুলোকে রাখতে হবে তারপর পুকুরে ছাড়তে হবে।
প্রতি কেজি খাবারের সাথে teramycin ট্যাবলেট (৩ মিলিগ্রাম) একটি করে এক সপ্তাহ খাওয়াতে হবে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ মারুফ*
*সহকারী তথ্য অফিসার (শস্য উৎপাদন), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫